মহিউদ্দিন শামিম

জন্ম- সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার রায়গঞ্জ গ্রামে। পিতা- মুক্তিযোদ্ধা রইস উদ্দিন আহমেদ। মাতা- আসমা আহমেদ।
রায়গঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রায়গঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা সিটি কলেজ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে বর্তমানে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে কর্মরত আছেন।
খুব ছোটবেলা থেকেই সংস্কৃতির সাথে তার বন্ধুত্ব। মাত্র ছয় বছর বয়সেই জাতিয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা এবং একক অভিনয়ে আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন। সেই থেকে আর পেছন ফিরে যাবার অবকাশ ছিল না।

দ্বীতিয় শ্রেণীতে অধ্যয়নের সময় স্কুলের ক্লাব স্কাউট লিডার নির্বাচিত হন। পিতার আদর্শ এবং মায়ের প্রেরণায় চলতে থাকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, খেলাধূলা এবং সামাজিক উন্নয়ন্মূলক কার্যক্রম। সমবয়সীদের নিয়ে গড়ে তোলেন রায়গঞ্জ জুনিয়ার ফুটবল ক্লাব, রায়গঞ্জ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন। অংশগ্রহন করেন স্থানীয় সকল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। আবৃত্তির পাশাপাশি কবিতা লেখা, গল্পলেখা, জারিগান, গাম্ভীরা এবং নাটকে অভিনয় করে প্রশংসিত হতে থাকেন।
২০০০ সালে কলেজে অধ্যয়নের সময় তিনি ‘পঞ্চম’ নামক সংগঠনে কাজ শুরু করেন। বিভিন্ন ম্যাগাজিনে তার লেখা কবিতা প্রকাশিত ও সমাদৃত হয়। ক্রমে তিনি আবৃত্তির দিকেই বেশি মননিবেশ করেন এবং ২০০২-এর ডিসেম্বরে মুক্তিধারা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রের সাথে সংযুক্ত হন।
সক্রিয় ছাত্র রাজনীতিতে সংযুক্ত থেকেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্টানে আবৃত্তি পরিবেশন এবং উপস্থাপনা করেন নিয়মিত। বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় তিনি মঞ্চনাটক, পথনাটক, গণসঙ্গীত-এ অংশ নেন এবং আবৃত্তি বিভাগ চালু করে রুদ্রকণ্ঠ, ইশতেহার, জন্মভূমি-বঙ্গভূমি, জনতার কণ্ঠস্বর, একুশের পঙতিমালাসহ বেশ কিছু প্রযোজনা গ্রন্থনা ও নির্দেশনা দেন।
মুক্তধারা আয়োজিত বৃন্দ পরিবেশনা উদ্দিপ্ত সমাধি, দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, শ্যামলের বিস্ময়, ইতিহাসচারিণী বাংলা, স্বাধীন সূর্যোদয়, প্রিয় স্বদেশ প্রিয় স্বাধীনতা, ঐকে বাঁধি বাংলার স্বাধীনতা, আলকিত চৈতন্যের স্বরে, আগমনী, পৌষ ফাগুনের পালা এবং ইসতেহার-এ একাধিকবার অঙ্গগ্রহণ করেন। তাছাড়া সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ প্রযোজনা- স্বদেশের সবুজ চিঠি, ভাবিকাল যার ডাকনাম, আটকা পড়েছি প্রেম কাব্যের আদি জালে, স্বপ্নের প্লাবনে ডুব সাঁতার, মখোমুখি দাঁড়াবার এইতো সময়, শাশ্বত পদাবলী, তবুও জীবন এবং ‘জানা শোনা অচেনা কথা’-সহ প্রায় সবকটি প্রযোজনায় তার উপস্থিতি ছিল উজ্জ্বল। মুক্তধারার বৃন্দ প্রযোজনা ইতিহাসচারিণী বাংলা, প্রভাতপাখির গান, হে নূতন প্রণমি তোমারে-এর নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বাংলদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ ও চ্যানেল আই কর্তৃক আয়োজিত বাংলাদেশের প্রথম আবৃত্তির ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযগিতা “কিউট চ্যানেল আই কর্তৃক ছন্দে আনন্দে ২০০৯” অংশগ্রহণ করে দেশসেরা তরুণ আবৃত্তিশিল্পী নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আয়জিত প্রায় সকল অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অভিযাত্রায় অংশগ্রহণ করে আসছেন। ২০১১ সালে সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংস্কৃতিক অভিযাত্রায় তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন। বাংলাদশ-ভারত যৌথ আয়োজনে রবীন্দ্র-সার্ধশত জন্মবর্ষের অনুষ্টানে তিনি আবৃত্তি পরিবেশন ও উপস্থাপন করেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত দেশব্যপী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় তিনি আবৃত্তি বিষয়ের বিচারক হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, বাংলদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন চ্যানেল ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তিনি নিয়মিত আবৃত্তি পরিবেশন ও উপস্থাপনা করে আসছেন। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সংগঠক হিসেবেও তিনি বিশেষ অবদান রাখছেন।
মূলত আবৃত্তি তার আজীবনের লালিত প্রেম এবং আবৃত্তি নিয়েই বাকী জীবন কাটানোর স্বপ্ন তার।
মহিউদ্দিন শামীমের আবৃত্তিকৃত কবিতাসমূহঃ
কবিতা | কবি |
---|---|
বাঁশি | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
লোকেন বোসের জার্নাল | জীবনানন্দ দাশ |
অনস্তিকে | মতিউর রহমান সাগর |
স্বপ্নতত্ত্ব | দীপঙ্কর মাহমুদ |
আমার উপগ্রহ | নওরোজ |
কাশফুলের কাব্য | নির্মলেন্দু গুণ |
অন্ধকার | জীবনানন্দ দাশ |
সোনার তরী | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হল | নির্মলেন্দু গুণ |
প্রাচ্যের সন্যাসী | মণিভূষণ ভট্টাচার্য্য |
ছড়া | মুহম্মদ এনায়েত হোসেন |
অভিশাপ দিচ্ছি | শামসুর রাহমান |